Breaking

Sunday, February 11, 2018

মুখোশ থ্রিলার চটি সিরিজ পার্ট ১.১




“বাবা ট্রেনে সাবধানে থাকিস। লোকজনের সাথে একটু বুঝে শুনে কথা বলিস, আর বেশী মেলামেশা বা মাখা মাখি একদম নয়। আর হ্যাঁ, পৌঁছেই আমার বা তোর মার মোবাইলে কল করে জানাবি কেমন আছিস। “ মাথা নেড়ে হুম মতন একটা শব্দ করে বুঝিয়ে দিলাম যে আমার চিন্তিত বাবার সব কটা কথা আমার মাথার সেলে গেঁথে গেছে। ট্রেনের সেকন্ড ক্লাস এসির দরজার পাদানিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার বাবা, মা আর আমাকে সি-অফ করতে আসা প্রায় জনা পনের লোকের সাথে হেসে হেসে কথা বলে বিদায় নিচ্ছি কোলকাতার উদ্দেশ্যে। কোলকাতার বড় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়তে যাচ্ছি। পড়তে যাচ্ছি না কি করতে যাচ্ছি সেটা...আপাতত ফ্যাক্ট বলতে গেলে এটাই বলতে হয় যে জয়েন্ট এন্ট্রান্সের রেজাল্ট বোর্ডে আমার নামের পাশে খুব ভাল র*্যাঙ্ক ছেপে দিয়েছে সরকার। অগত্যা কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনা করতে হবে। ট্রেন ছাড়তে আর বেশী দেরী নেই, তাই সবার কাছ থেকে সাবধানে থাকার জ্ঞানের পরিমাণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। আমার মনেও যে কোনও উদ্বেগের ভাব নেই সেটা সত্য নয়। আমিও ভেতরে ভেতরে চিন্তিত আর উদ্বিগ্ন। তবে, এই রকম মানসিক অবস্থা আমার কাছে নতুন কিছু নয়। “এত বড় কলেজে পড়তে যাচ্ছি…” জানি না, আমার কি গর্বিত হওয়া উচিৎ ছিল না?

Related image

ভাবনায় ছেদ পড়ল কারণ একজন লোক সপরিবারে এসে আমাকে প্রায় ধাক্কা দিয়ে ট্রেনের পাদানি থেকে টেনে নিচে নামিয়ে দিল। তার সাথে আবার পাঁচটা লাগেজ। তিনটে ইয়া বড় বড় সুটকেস। আর, লাগেজ বলতে একটা ষণ্ডা মার্কা বউ, আর একটা ততধিক কুৎসিত মেয়ে। প্রথমেই ওনার গিন্নী আর মেয়ে উঠে গেল কামড়ায়। তারপর উনি একে একে সুটকেস গুলিকে দরজার উপরে রাখার কসরত শুরু করলেন। বোধহয় সব থেকে দামী লাগেজ দুটোকে অর্থাৎ স্ত্রী আর কন্যাকে কামড়ার নিরাপত্তায় উঠিয়ে দিতে পেরে অনেকটা স্বস্তি বোধ করছেন।আর সেই জন্যই হয়ত ওনার ভদ্রতা বোধটায় একটু জোয়ার এসেছে। আমাকে যে এক রকম প্রায় ধাক্কা দিয়েই ট্রেনের পাদানি থেকে একটু আগে নামিয়ে দিয়েছিলেন সেটা মনে করে এতক্ষনে বোধহয় ওনার মনে একটু লজ্জার ভাবও জেগে উঠেছে। আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে হাঁপ ধরা গলায় একটা “সরি” বলে কোনও মতে গায়ের সব জোর খাটিয়ে প্রথম সুটকেসটাকে দরজার ভেতর চালান করে দিলেন। আমি আশা করেছিলাম যে ওনার স্ত্রী বা কন্যার মধ্যে অন্তত একজন ওনাকে এই ট্রেনের মধ্যে মাল ওঠানোর ব্যাপারে সাহায্য করবেন। কিন্তু আদপেও তেমন কিছু হল না। তারা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকেই কোথায় যেন গায়েব হয়ে গেলেন, বোধহয় নিজেদের সিটের সন্ধানে এগিয়ে গেছেন ওরা। কি বিচিত্র রে বাবা এই দুটো মেয়ে ছেলে। পেছনে ভদ্রলোক ট্রেনের বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সুটকেসের ভারে হিমশিম খাচ্ছেন আর ওদের সিটের টেনশন। আরে ক্ষ্যাপা সিট কি কোথাও পালিয়ে যাচ্ছে না কি! লোকটার হাবভাব দেখে বুঝতে পারছি যে সুটকেসগুলো সত্যিই বেশ ভারী। সুটকেসের নিচে চাকা থাকায় ষ্টেশন দিয়ে দৌড়ে আসার সময় তিনজনের কোনও অসুবিধা হয়নি। কিন্তু এখানে কামরার উচ্চতা বেশ বেশী। সুতরাং একটা সুটকেস ওঠাতেই লোকটার প্রায় অক্কা পাবার অবস্থা। দুটো সুটকেস কোনও মতে দরজার ভেতরে রেখে উনি পকেট থেকে রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছলেন।

আমার অন্য দিকে অবশ্য “ভালো থাকিস, সাবধানে থাকিস, টাকা লাগলে সাথে সাথে কল করে জানাবি, হোটেলের বুকিং হয়ে গেছে, চেক ইন করে জানাবি” ইত্যাদি ভাষণের বন্যা অবিরল হয়েই চলেছে। এ সব কথাই আমার জানা। কিভাবে সবাধানে থাকতে হয় তাও মনে হয় আমি জানি। আর হোটেল সংক্রান্ত বা কলেজ সংক্রান্ত যে সব তথ্য বারবার আমার সামনে তুলে ধরছে ওরা সেই সবই আমার মুখস্থ হয়ে গিয়েছে। যদিও আমি ওদের সব কথা ভীষণ মন দিয়ে শোনার ভান করে ঘাড় নাড়িয়ে চলেছি, আমার চোখ আর মন, দুইই কিন্তু পড়ে আছে এই অসহায় লোকটার কার্য কলাপের দিকে। মনে মনে বেশ একটা কৌতুক অনুভব করছি ওর হাবভাব দেখে তাতে সন্দেহ নেই। লোকটা শেষ সুটকেসটা কোন মতে দরজার মুখে রাখতে যাবেন, ঠিক এমন সময় ভেতর থেকে একটা অল্প বয়সী ছেলে দৌড়ে এসে দরজার মুখে হাজির হল। ছেলেটার বয়স প্রায় আমারই মতন। দুটো সুটকেস দরজার মুখ আগলে দাঁড়িয়ে থাকায় ছেলেটা যে যারপরনাই বিরক্ত হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। “দূর বাল গান্ডু, দরজার মুখটা আটকে রেখে দিয়েছে” বলেই একটা সুটকেস লাথি মেরে দরজার মুখ থেকে পেছন দিকে সরিয়ে দিল, আর আরেকটা সুটকেস ততধিক বিরক্তির সাথে লাথি মেরে উপুড় করে কামড়ার মেঝেতে ফেলে দিল। লোকটা কোনও মতে ততক্ষণে থার্ড সুটকেসটা মাটি থেকে তুলে ধরেছেন। কিন্তু সেটাকে আর দরজার মুখে রাখা হল না ওনার। ছেলেটা লোকটাকে তার সুটকেস সমেত প্রায় ধাক্কা মেরে দরজার মুখ থেকে সরিয়ে দিয়ে কামরার দরজা দিয়ে নেমে ষ্টেশনের ক্যান্টিনের দিকে দৌড় মারল। সুটকেস সমেত লোকটা সশব্দে ধাই করে ষ্টেশনের মেঝেতে পড়তেই গার্ডের হুইসেল বেজে উঠল। লোকটা যে বেজায় ব্যথা পেয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। হুইসেলের শব্দে যেন কিছুটা ব্যস্ত হয়েই ওঠার চেষ্টা করলেন। কিন্তু পারলেন না। সুটকেসটা এখনও তার হাঁটুর ওপর শুয়ে রয়েছে। ডান পায়ের হাঁটুটা ভেঙ্গে যায় নি তো? কিন্তু এই মুহূর্তে আর সময় নেই ওনার দিকে তাকানোর। বাবা, মা আর বাকি গুরুজনদের পা ছুয়ে প্রনাম করতে করতেই আড়চোখে দেখে নিলাম যে সেই অল্প বয়সী ছেলেটা ক্যান্টিনের বাইরের একটা বড় সিগারেটের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকটা প্যাকেট সিগারেট, কেক, চিপস, ক্যাডবেরি ইত্যাদি একটা প্লাস্টিকে পুড়ছে, ওরও সতর্ক চোখ কিন্তু সামনের সিগন্যালের দিকে। এই লোকটার আর ওই ছেলেটার, দুজনেরই ট্রেন মিস করার ভয় এখন পুরো মাত্রায়। প্রনাম পর্ব শেষ করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম চটপটে ছেলেটা দুটো প্লাস্টিকের থলি হাতে কোনও মতে দৌড়ে এসে আবার আমাদের সামনে দিয়ে কামড়ার ভেতরে ঢুকে ভ্যানিশ হয়ে গেল। লোকটা এতক্ষনে কোনও মতে উঠে দাঁড়িয়েছেন, সুটকেসটা যদিও ষ্টেশনের ধুলায় এখনও লুটোপুটি খাচ্ছে। উনি আমাকে সরি বলেছেন, তাই আমারও উচিৎ ওনাকে একটু সাহায্য করা। ট্রেনের শরীরে এদিকে সশব্দ কম্পন জেগে উঠেছে। ট্রেন সামনের দিকে এগোতে শুরু করেছে। আমি লোকটাকে মৃদু স্বরে বললাম, “উঠে পড়ুন। আমি ওইটা উঠিয়ে নিচ্ছি।” উনিও একটা ছোট থ্যাংকস মতন শব্দ করে চলতি ট্রেনে উঠে পড়লেন, আর আমিও ওনার পিছন পিছন ওনার ভারী সুটকেসটাকে দরজার পাদানির ওপর উঠিয়ে এক লাফে ট্রেনে উঠে পড়লাম। হাত নেড়ে সবাইকে গুডবাই জানিয়ে দরজাটা টেনে দিলাম। সবার মুখে যে গভীর দুশ্চিন্তার ছবি আঁকা হয়ে রয়েছে সেটা বুঝতে অসুবিধা হল না। উনি আরেকবার আমাকে থ্যাংকস জানিয়ে আবার পকেট থেকে রুমাল বের করে ঘাম মুছতে শুরু করলেন। ওনাকে এই বিপদের সময় সাহায্য করেছি ঠিকই কিন্তু আমি ওনার কুলি নই, তাই কি ভাবে উনি এই তিনটে সুটকেস নিয়ে সিট অব্দি পৌছাবেন সে চিন্তা আমার নয়।, ওনার শেষ সুটকেসটা দরজার মুখেই ছেড়ে দিয়ে আমি ভেতরে ঢুকে গেলাম। ঝপ করে গিয়ে বসে পড়লাম জানলার ধারে। এটাই আমার সিট। আমার সামনে এখন নতুন জীবনের হাতছানি, অনেক কাজ সামনে। চিন্তায় ডুবে গেলাম।

ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে করতে একটু যেন তন্দ্রা মতন এসে গেছিল। ছোটবেলা থেকেই আমার অভ্যেস আছে যে কোনো পরিস্থিতিতে বসে ঘুমিয়ে নেওয়ার। মাঠে বসে পাথরের ওপর পিঠ দিয়ে কতবার ঘুমিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই, আর এখানে তো বদ্ধ কামরার মধ্যে সুন্দর এসি চলছে। কিছুক্ষণ পর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটল। খাবার অর্ডার নিতে এসেছে। একটা নন ভেজ চিকেন মিল বলে দিয়ে আবার মাথাটা ঠাণ্ডা জানলার কাঁচের ওপর নামিয়ে রেখে ঘুম লাগালাম।

আমার সহ যাত্রী একটা তামিল ফ্যামিলি। আমাদের মফস্বলে ওরা কি করতে এসেছিল তা অবশ্য বুঝতে পারলাম না। কিন্তু এখন ওরা সপরিবারে ধেয়ে চলেছে কোলকাতার উদ্দেশ্য। ওনারা তামিলেই কথা চালিয়ে গেলেন। আমি তামিল বুঝি। কেন তামিল বুঝি, কি বৃত্তান্ত, সেটা বলতে গেলে লেখা বেড়ে যাবে। তাই আপাতত কাটিয়ে দিচ্ছি। ওনার আর ওনার স্ত্রীর মধ্যে যে কথা বার্তা হল সেটা থেকে বুঝলাম যে উনি কোলকাতার কোনও বড় কোম্পানিতে চাকরি করেন আর ওনার কাজের ভীষণ চাপ। আর হ্যাঁ পরে অবশ্য জানতে পেরেছিলাম যে উনি ওনার এক কুটুম্বের সাথে দেখা করতে আমাদের মফস্বলে এসেছিলেন। ওনার সেই আত্মীয় একটা বড় পাওয়ার প্ল্যান্টের ফ্লোর ম্যানেজার এই আমাদেরই মফস্বল শহরে।

রাতে খেয়ে শুয়ে পড়লাম। আমার বার্থ নিচেই। ট্রেন কলকাতা পৌঁছাবে খুব ভোরে। মোবাইলে অ*্যালার্ম দেওয়া আছে। তবে অ*্যালার্মের দরকার হয়নি। ষ্টেশনে গাড়ি ঢুকবার অনেক আগেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। আসলে ঘুমটা তেমন ডিপ হয়নি। চোখ খুলে দেখলাম পুরো কামরা তখনও নিদ্রামগ্ন। চুপচাপ ব্রাশ হাতে বাথরুমের দিকে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলাম তখনও আমার কুপের সব কটা সহযাত্রী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ষ্টেশন আসতে কিন্তু আর বেশী দেরী নেই। সমস্ত কুপ জুড়ে প্রবল নাক ডাকার শব্দ। অবশ্য ব্রাশ করে ফ্রেশ হয়ে ফিরে আসার সময় খেয়াল করলাম যে আমাদের কুপে না হলেও ভেতরের দিকে কোনও কোনও কুপের ভেতর আলো জ্বলতে শুরু করেছে।

কোলকাতায় এই আমার দ্বিতীয় বার আসা। আগের আর এসেছিলাম কাউন্সেলিং এর সময়। বাপরে বাপ কি ব্যস্ত এই শহর। লোকের ভিড়ে পুরো উপচে পড়েছে। এমনিতে হয়ত আমাকে বাইরে বেড়িয়ে প্রিপেড ট্যাক্সি ধরতে হত, কিন্তু আজ আমাকে সেই ট্যাক্সির লাইনে দাঁড়াতে হল না। হাওড়ার পার্কিং প্লেসে আমার জন্য গাড়ি অপেক্ষা করছে। বাবা-ই ঠিক করে রেখেছিল আগে ভাগে। যে আমাকে নিতে এসেছে সেই লোকটাকেও আমি চিনি। ওর দেশের বাড়ি আমাদের বাড়ির খুব কাছে। গাড়িটা খুঁজে পেতে অসুবিধা হল না কারণ ট্রেন থেকে নামার আগেই মোবাইলে ওর সাথে কথা হয়ে গিয়েছিল। আমাদের দুজনের কাছেই দুজনের নাম্বার দেওয়া ছিল। লোকটা জানে আমাকে কোথায় নিয়ে যেতে হবে। সোজা ধেয়ে চলল আমার হোটেলের দিকে। গাড়িটা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। পেছনের সিটে বসে আরামে চোখ বুজে আরেকটা ঘুম লাগালাম। জানি হোটেলে পৌঁছাতে এখনও প্রায় চল্লিশ মিনিট লাগবে। চেনা শোনা হলেও লোকটার সাথে পথে আমার একটাও কথা হল না।

আমি আসলে অকারনে কথা বলা পছন্দ করি না। ছোট বেলা থেকে সবাই শিখিয়েছে যে বাড়তি কথা বলার কোনও মানে হয় না, আর বাড়তি কথার মানেই হল নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনা। প্রয়োজন ছাড়া কথা বলা বা কারোর সাথে মেশা আমি পছন্দ করি না। এটা আমার রক্তে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। পথে মাঝে দু একবার চোখ খুলে বাইরেটা দেখে নিলাম। ষ্টেশনের ভিড় দেখে যদিও আমি কোলকাতার জনসংখ্যার আভাষ পেয়ে গেছি, কিন্তু রাস্তায় সত্যি বলতে সেরকম কিছু দেখলাম না। গোটা শহরটা এখনও কেমন যেন ঘুমিয়ে আছে। পূবের আকাশে এখনও তেমন ভাবে আলো ফুটে ওঠেনি। গুটি কয়েক দোকানের সামনে দেখলাম দু এক জন লোক বসে উনুনে আগুন দিচ্ছে। সময়ের আগেই হোটেলে পৌঁছে গেলাম। হোটেলটা খুব একটা বড় কিছু না হলেও বাজেটের মধ্যে ছিমছাম হোটেল। একটা এসি রুম বাবা আমার জন্য বরাদ্দ করেই রেখেছে। প্রায় এক মাসের অগ্রিম বুকিং আগে থেকে করা আছে। অ্যাডভান্স দেওয়া আছে। এই এক মাসের মধ্যে অবশ্য আমাকে অন্য কোথাও একটা শস্তা জায়গায় মাথা গোঁজার আর খাওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলতেই হবে। বাবা মুখে যাই বলুক না কেন যে আমাকে টাকা পয়সা নিয়ে ভাবতে হবে না... কিন্তু এই হোটেলে বেশী দিন থাকতে হলে ওনার কপালে যে ঘোর দুর্ভোগ আছে সেটা বলাই বাহুল্য। রুমের প্রত্যেক দিনের ভাড়া ১২০০ টাকা। বাবার টাকা থাকতে পারে, কিন্তু এই হোটেলে এক টানা বেশী দিন থাকতে হলে, যে কারুর হাতে হ্যারিকেন এসে যাবে। আগেই বললাম এখনও শহর ঘুমের আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠতে পারে নি। হোটেলের রিসেপসনেরও একই অবস্থা। রিসেপসন এখন ফাঁকা। শুধু রিসেপসন বললে ভুল বলা হবে, কারণ হোটেলের মেইন গেট দিয়ে ঢোকার সময় আমাকে এক জন ঘুমন্ত সিকিউরিটির ঘুম ভাঙাতে হয়েছে। অবশ্য এটা আমার জন্য এক দিক থেকে ভালো।

লাল রঙের শাড়ি পরা একটা মেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে স্বাগত জানাল। মেয়েটার বোধহয় নাইট ডিউটি ছিল। কারণ সারা মুখে ক্লান্তির ছায়া। বোধহয় রিসেপসনে বসে বসেই কাজের অভাবে উঁচু চেয়ারের ওপর মাথার পেছন দিকটা এলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। এটা মনে হওয়ার দুটো কারণ । এক, মেয়েটার মুখের সামনের দিকের চুলের বেশভুষা আর সজ্জায় বেশ একটা পারিপাট্য থাকলেও মাথার পেছনের দিকে ক্লিপ বাঁধা চুলের খোঁপাটা বেশ অবিন্যস্ত হয়ে গেছে, নিজের জায়গা ছেড়ে বেশ কিছুটা উপরে উঠে গেছে। দুই, চোখ দুটোও ঘুমে লাল হয়ে আছে। মেয়েটা আমার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যতক্ষণ কম্পিউটারে আমার বুকিং এর ডিটেলস চেক করছিল ততক্ষণ আমি মেয়েটাকে একটু আপাদ মস্তক মেপে নিলাম।

বয়স খুব বেশী হলে ৩৪। মুখটা বেশ মিষ্টি। অথবা জানি না মেক আপের জন্য মিষ্টি লাগছে কি না। বিবাহিতা কিনা সঠিক ভাবে বোঝা শক্ত কারণ সিঁথিতে সিঁদুর নেই। অবশ্য অনেক শহুরে মেয়েরাই যে এখন শাঁখা সিঁদুরের ধার ধারে না সেটা আমার অজানা নয়। তবে ডান হাতে দুটো সোনার পাতলা বালা দেখে মনে হল যে ইনি বিবাহিতা। পরনে ম্যাচিং ছোট হাতা ব্লাউজ। বুঝলাম এই লাল শাড়ি আর ব্লাউজ এই হোটেলে কাজ করা মেয়েদের ইউনিফর্ম। ফিগারটা না রোগা না মোটার দিকে। গায়ের রঙ চাপা। আমি আকস্মিক ভাবে এত ভোরে এসে পড়ায় একটু বিচলিত হয়ে পড়েছে। শাড়ির বুকের কাছটাও একটু অবিন্যস্ত। আঁচলটা সামান্য স্রু হয়ে উঠে থাকায় লাল চাপা ব্লাউজে ঢাকা বাঁ দিকের গোল স্তনটা আর স্তনগুলোর উপরের জায়গার বেশ খানিকটা উন্মুক্ত। দেখে মনে হল স্তনের সাইজ খুব বড় নয়। ব্লাউজের গলার কাছে স্তন বিভাজিকারর সামান্য অংশ অনাবৃত হয়ে রয়েছে অসাবধানতায়। তবে সুগভীর বুকের খাঁজ বলতে যা বোঝায় তেমন নয়। এসি তে বসে থাকা সত্ত্বেও স্তন বিভাজিকার শুরুতে আর গলার নিচে কয়েক বিন্দু উজ্জ্বল ঘামের ফোঁটা জমে রয়েছে। আঁটসাঁট ভাবে শরীরের ওপর জড়িয়ে রাখা শাড়িটার পেটের কাছটাও বেশ খানিকটা স্থানচ্যুত হয়ে গেছে। শ্যামলা রঙের পেট আর তলপেটের অনেকটা অংশই নগ্ন হয়ে আছে শাড়িটা সরে যাওয়ায়। পেটে চর্বি প্রায় নেই বললেই চলে। নগ্ন তলপেটের আরেকটু নিচের দিকে ঠিক মাঝ বরাবর বসানো আছে একটা গোল সুগভীর নাভি। নাহ, স্তনগুলোর সাইজ আর স্তন বিভাজিকার গভীরতা চোখে পড়ার মতন না হলেও, মনে মনে এর নাভির গোলাকৃতি আর গভীরতার প্রশংসা না করে পারলাম না। পেট আর তলপেটে তেমন চর্বি না থাকলেও মেয়েটার নাভির গভীর গর্তটার চারপাশের নগ্ন মাংসে যে সামান্য ফোলা ফোলা একটা স্ফীত ভাব রয়েছে সেটা চোখ এড়ালো না। শাড়িটা বাঁধা আছে নাভির ঠিক দুই ইঞ্চি মতন নিচে। তার নিচে পুরোটাই ওই শাড়ির নিচে ঢাকা। কি কি লোকানো আছে কে জানে। পেছনটা মাপার ইচ্ছে থাকলেও সেটা সম্ভব নয় কারণ মেয়েটা আমার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। তবে সামনে থেকে বা পাশ থেকে দেখে যা বুঝলাম পাছার শেপ খারাপ নয়, বেশ গোল, কিন্তু স্তনের মতই পাছার আকৃতিও না মোটা না রোগার দিকে, মানে সাইজে একটু চাপার দিকেই পড়ে, মানে এক কথায় এই মেয়েটাকে উচ্চ নিতম্বিনী বলে সম্বোধন করা যায় না। অবশ্য ৩৪ বছরের কাউকে মেয়ে না বলে মহিলা বলাই ভালো।

“প্লীজ এই ফর্মটা একটু ফিল আপ করে দেবেন” বলাতে, আমি যা যা লিখলাম সেটা এই মতন ঃ
নামঃ সংকেত রায়।
বয়সঃ ২০ (সঠিক ভাবে বলতে গেলে ২০ বছর ২ মাস)
বাবাঃ সুবীর রায়।
ঠিকানাঃ ১৭ নম্বর …… মিরাট, উত্তরপ্রদেশ।
লোকাল ঠিকানাঃ ২ নম্বর, নতুন …… গোপালবাজার, পশ্চিমবঙ্গ।
আসার কারনঃ পড়াশুনা, ইঞ্জিনিয়ারিং। কলেজ…
কতদিন থাকার ইচ্ছেঃ ১ মাস।
মোবাইলঃ …………...
আই কার্ডঃ ভোটার আইডি কার্ড। নম্বরঃ *********************

সই।


পরবর্তী অংশ অফিসের আধিকারিক ভরবেনঃ
রুম নম্বরঃ ১০৭
সই।
(একটা টানা হাতের সই যার শেষের জায়গাটা হল সরকার )

ফর্মটা ভরতে ভরতে একবার চোখ তুলে দেখে ছিলাম টেবিলের ওপর পড়ে আছে একটা চৌকো মতন ল্যামিনেটেড আই কার্ড। তাতে লেখা আছে “মালিনী সরকার। সিনিয়র ফ্রন্ট ডেস্ক অফিসার।” ওপরে একটা স্ক্যান করা ছবি। ছবিটা কার সেটা বলাই বাহুল্য।

একজন বেয়ারা ইতিমধ্যে এসে দাঁড়িয়েছে কাউন্টারে। আমার দুটো বড় ব্যাগ আর একটা ছোট অ*্যাটাচি। লোকটা তিনটে জিনিসই মাটি থেকে তুলে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিক্ষা করছে কখন এইসব সই সাবুত শেষ হয়। মহিলা আমার কাছ থেকে আমার ভোটার আইডি কার্ডটা চেয়ে নিয়ে তার একটা স্ক্যান করে, একটা প্রিন্ট বার করে কার্ডটা আমাকে ফেরত করে দিল একটা হাসি আর ধন্যবাদের সাথে। যতক্ষণ মহিলা এইসব স্ক্যান আর প্রিন্টিং করছিল ততক্ষণ আমি স্বভাববশতই হোটেলের এই গ্রাউন্ড ফ্লোরের চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। (তার আগে অবশ্য মেয়েটার শাড়িতে ঢাকা অনুচ্চ অথচ মসৃণ গোল নিতম্বের ওপর চোখ বুলিয়ে নিতে ভুলিনি। এটাও আমার আরেকটা স্বভাব। ওর পাছার ব্যাপারে অবশ্য নতুন করে কিছুই লেখার নেই। ) তাই গ্রাউন্ড ফ্লোরের ব্যাপারেই বলি। এক দিকে পাশাপাশি ছেলে আর মেয়েদের জন্য টয়লেট। তার ঠিক পাশেই দুটো পাশাপাশি অত্যাধুনিক লিফট। রিসেপসনের ডান দিকে হল ঘরের এক কোনায় একটা এমারজেন্সি এক্সিট। তার মানে ওই দরজার পিছনেই সিঁড়ির ধাপ নেমে এসেছে ওপর থেকে নিচে। এত কিছু লক্ষ্য করার সত্যিই কিছু নেই, আবারও বলছি যা দেখছি সবই অভ্যাস বশে। আমি শুধু ভাবছি এই গভীর নাভির অধিকারিণীর সাথে যদি আরেকটু ফ্লার্ট করা যায়। আমি শুনেছি এখানকার মেয়েদের সাথে ভাব জমানো নাকি খুব একটা কঠিন নয়। তবে শুরুতেই বুভুক্ষুর মতন হামলে পড়লে বিপদ হতে পারে। যাই হোক। হোটেল থেকে বেরনোর দরজা সব মিলিয়ে চারটে। চারটের সামনেই সিকিউরিটি দাঁড়িয়ে আছে, যদিও ঢুলু ঢুলু চোখে। বিল্ডিং থেকে বেড়িয়ে দশ গজের মধ্যে মেইন গেট। বিল্ডিং এর চারপাশ ঘিরে আছে ওপেন পার্কিং প্লেস। ভালো হোটেল তাতে সন্দেহ নেই। আইডি কার্ডটা ফেরত নিয়ে একটু গলা খাঁকড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম “মালিনীদি। একটা কথা ছিল । ইয়ে যদি কিছু মনে না করেন!” ও একটু অবাক হল বটে আমার সম্বোধনে, কিন্তু তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলে নিয়ে হেঁসে বলল “ বলুন।” আমি বললাম “ ইয়ে এক কাপ চা পাওয়া যাবে? অনেকক্ষণ কিছু খাওয়া হয় নি। “ ও এক নিমেষে আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রুম বয়টাকে বলে দিল যে আমাকে রুমে নিয়ে গিয়ে বুঝিয়ে দিতে কোন নম্বরে ফোন করলে খাবার পাওয়া যাবে, রুম সার্ভিস কত নম্বরে ইত্যাদি। আমার চেষ্টা মাঠে মারা গেল। বেচারি।

আমি বেয়ারার পেছন পেছেন যেতে যেতে কি মনে হতে পেছন ফিরলাম। না, এখনও বাঁ দিকের স্তনটা, স্তন বিভাজিকার উপরিভাগ আর নাভি সমেত সমস্ত তলপেট নগ্ন রেখে আনমনে ও খাতা আর কাগজ গোছাতে ব্যস্ত। না আরেকটা ট্রাই করাই যায়। মানে আরেকটু হেজিয়ে আরেকটু সময় কাটিয়ে আরেকটু ঝাড়ি মারার চেষ্টা। আমি আবার এগিয়ে গেলাম কর্মরত মহিলাটির দিকে। “ইয়ে…” ও আবার মুখ তুলে তাকাল। বললাম “ইয়ে লিখেছি এক মাস থাকব। কিন্তু ঠিক নেই কিছু কত দিনে এখানে কিছু একটা শস্তায় জোগাড় করতে পারি। তো পরে আরও কয়েক দিন থাকতে চাইলে থাকতে পারব?” ওর ভুরুটা একটু কুঁচকেই নামিয়ে নিল। পরের প্রশ্নটা একটু সোজাসুজি হলেও আমি এর জন্য তৈরি ছিলাম। “আপনার ফ্যামিলির কি বিজনেসে আছে?” বুঝলাম এতগুল টাকা দিনের পর দিন একটা ছাত্রের পেছনে কোন ফ্যামিলিই বা ওড়াতে পারে। আমি সহজ ভাবে কিন্তু ইচ্ছে করেই একটু দম্ভ মেশানো স্বরে বললাম “ঠিক বিজনেস না হলেও আমার বাবাকে উত্তরপ্রদেশ আর এখানকার অনেক লোক খুব মানে। কয়েক মাস এই হোটেলে চালিয়ে নেওয়া বোধহয় খুব কষ্ট হবে না। তবে আমি খুব তাড়াতাড়ি খুঁজে নেবার চেষ্টা করব। কিন্তু জাস্ট ইন কেস… ধরুন পছন্দ মতন রুম না পেলে তখন …” মালিনী এক মুখ হাঁসি (যদিও তিক্ত) নিয়ে বলল “স্যার, সাত দিন আগে থেকে বলে দেবেন, কোনও সমস্যা হবে না, আমি কথা দিচ্ছি। “ বুঝলাম মাগীটা মনে মনে ভাবছে, বাপের অগাধ টাকা। ছেলেকে কোলকাতায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পাঠিয়েছে। এখন ছেলের ওপর হোটেলে অগাধ পয়সা ঢালছে। এর পর ছেলের ফুর্তির পেছনে ঢালবে। আর এই ছেলে বাপের টাকা উড়িয়ে কোনও একদিন ফিরে যাবে মায়ের আঁচলের তলায়। সে যাই ভাবুক তাতে আমার কিছু এসে যায় না। এই কথা বার্তার সুযোগে আরও এক মিনিট অন্তত ওর সুগভীর নগ্ন নাভির দর্শন তো পাওয়া গেল। আমি ফিরতে যাব, ঠিক সেই সময় আরেকটা প্রশ্ন এলো। এইবার মালিনী দেবী আমাকে নিজের থেকে একটা প্রশ্ন করেছেন। না দাঁড়িয়ে উপায় আছে! “ ইয়ে তবুও কতদিন থাকতে পারেন খুব ম্যাক্স টু ম্যাক্স।” দেখলাম আমার ফিল আপ করা ফর্মটা বের করে হাতের কলমের মুখটাকে ঠিক “”কতদিন থাকার ইচ্ছেঃ”,” ওই জায়গাটার ওপর স্থির করে আমার উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিয়েছে ও। তবে আমি ওর কলমের পজিশনটা লক্ষ্য করলাম আড়চোখে, কারণ ওর দিকে ফেরার সাথে সাথে আমার চোখ জোড়া অবাধ্যের মতন আবার ওর নগ্ন তলপেট আর নাভির ওপর গিয়ে আটকে গেছে। আমার দিক থেকে জবাবটা এল সাথে সাথে “ম্যাক্স টু ম্যাক্স আট মাস” । ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও যেন একটু আঁতকে উঠল। বিশ্বাস করতে পারছে না, দিনে ১২০০ টাকা দিয়ে আট মাস ধরে আমি সত্যি এই হোটেলে পড়ে থাকতে পারি। দেখলাম ওর কলমের নিচে কয়েকটা ঘর্ষণ হল। ব্র্যাকেটে লিখে নিল , এইট মান্থস। মনে মনে হাসলাম। দেখলাম ওর মুখেও একটা মৃদু হাসি। কি ভাবছে বলা শক্ত। বোধহয় ভাবছে, শালা দুদিনে কাটবে, এখন বেকার শো-অফ করছে আমার সামনে। সে যাই ভাবুক। আমি হাসি মুখে পিছনে ফিরে বেয়ারাকে বললাম “চলো হে। দেখি তোমাদের রুম কেমন।” বেয়ারার সাথে যেতে যেতে একটু গলা চড়িয়ে ওই মালিনী মাগীর উদ্দেশ্যেই বললাম “হলে আট মাসেই হবে, নইলে আমার দ্বারা আদপেও হবে না।” ঘাড়টা ঘুরিয়ে দেখলাম ও কেমন একটা ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া মুখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। একটা কুড়ি বছরের ছেলের কাছ থেকে শো-অফ অব্দি বোধহয় আশা করেছিল, কিন্তু এহেন অর্থহীন কথা আশা করেনি। বোধহয় পরে মনে মনে বলবে যে একটা ডেঁপো ছেলে এসে উঠেছে এই হোটেলে। আবারও মনে মনে হাসলাম শুধু। লিফট নিচেই দাঁড়িয়ে ছিল। উঠে পড়লাম।

Collected from: Here

No comments:

Post a Comment